Monday, June 11, 2012

ইসলাম বনাম হতাশা-১

কালামে পাক অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবে হতাশা ও কুচিন্তাকে পাপ ও মন্দকাজ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং মুসলমানদের পরস্পরের প্রতি খারাপ ধারণা পোষণ করা সম্পর্কে সতর্ক করেছে ।
‘হে ঈমানদারগণ! অধিকাংশ অমূলক ধারণা করা পরিহার করো, কেননা আন্দাজ অনুমান কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিশ্চিতরুপে গুনাহের কাজ হিসেবে পরিগণিত । ’ *আল-কুরআন*

’ইসলাম ধর্ম সুনির্দিষ্ট সাক্ষ না পাওয়া পর্যন্ত সন্দেহকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে । আল্লাহর নবী (সঃ) বলেছেনঃ-
এক মুসলমনের জীবন, রক্ত ও সম্পদ অন্য মুসলমানের কাছে পবিত্র । এক মুসলমানকে অন্য মুসলমান সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা করা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে ।’
তিরমিজি,১৮ অধ্যায়, ইবনে মাজা, ২য় অধ্যায়, মুসলিম, ৩২ অধ্যায়, আহমদ্‌, ২য় খন্ড, ২৭৭ পৃষ্ঠা এবং ৩য় খন্ড, ৪৯১ পৃষ্ঠা ।
সুতরাং উপযুক্ত সাক্ষী ব্যতিরেকে একজনের সম্পত্তি অন্যকে হস্তান্তর করা যেমন নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তেমনিভাবে সন্দেহাতীত প্রমাণ ব্যতিরেকে একজন মানুষকে কোনো অন্যায় কাজের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা বা সন্দেহ করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে । আমিরুল মোমেনিন (রাঃ) বলেছেন, ‘নিছক আন্দাজ অনুমানের ভিত্তিতে একজন বিশ্বস্ত লোকের বিচার করা ঠিক নয় ।’
*নাজ্জুল বালাগা, ১৭৪ পৃষ্ঠা*

অতপর তিনি সন্দেহজনক কাজের খারাপ ও দুঃখজনক ‍দিকসমূহ তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন । ‘সন্দেহ করার ব্যাপারে সতর্ক হও, কেননা সন্দেহ ইবাদত ধ্বংস করে এবয় গুনাহ বৃদ্ধি করে ।
*গুরার আল হিকাম, ১৪৫ পৃষ্ঠা ।*

এমনকি তিনি একজন দয়ালু ব্যক্তিকে অত্যাচারী হিসেবে সন্দেহ করার বিষয় বর্ণনা করেছেন ।
দয়ালু ব্যক্তিকে (সৎকর্মশীল) সন্দেহ করাকে তিনি নিকৃষ্ট পাপ ও কুৎসিত ধরনের বলে অভিহিত করেছেন ।
*গুরার আল হিকাম, ৪৩৪ পৃষ্ঠা ।*
তিনি আরো বলেছেন, তোমার প্রিয়জনকে সন্দেহ করার ফলে সম্পর্কের অবনতি ঘটে এবং শেষ পর্যন্ত তা বিচ্ছিন্নতায় পর্যবসিত হয় ।  হযরত আলী (রাঃ) বলেছেন, ‘সন্দেহপ্রবণ ব্যক্তি, বন্ধু ও প্রিয়জনের সঙ্গেও শান্তিতে থাকতে পারে না ।’
*গুরার আল হিকাম, ৬৯৮ পৃষ্ঠা ।*
হীন স্বভাবের লোকেরা তাদের অন্যদের কাজের বিচারক নির্বাচন করে থাকে । এতে অন্যদের যাবতীয় অপকর্ম তাদের মধ্যে প্রতিফলিত হয় । হযরত আলী (রাঃ) এ সত্য তুলে ধরতে ‍গিয়ে বলেছেন- ’বদকার লোকরা কখনো অন্যের মঙ্গল চিন্ত করে না, কেননা তারা অন্যদের তাদের নিজেদের খারাপ আচরণের দৃষ্টিতে দেখে থাকে ।’

সন্দেহপ্রবণতা, অন্যান্য ব্যক্তি ও সন্দেহকারীর নিজস্ব উৎসাহ উদ্দীপনা ও আচরণের ওপর প্রতিকূল প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। সন্দেহ কোনো কোনো সময় সন্দেহ কারীর ব্যক্তিদের সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্ত করে দুর্নীতি ও নীচতার দিকে পরিচালিত করে ।
ইমার আলী (রাঃ) বলেছেনঃ- ‘সন্দেহ কাজ কর্মকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে এরং মন্দ প্রবণতাকে উৎসাহ করে ।
*গুরার আল হিকাম, ৪৩৩ পৃষ্ঠা ।*

ডা. মার্ডিন বলেছেন, ‘কোনো কোনো ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের মালিকেরা তাদের কর্মচারীদের চুরি করে বলে সন্দেহ করে থাকে এবং শেষ পর্যন্ত তাদের প্রতি চুরি করার সন্দেহ তাদের চুরি করতে বাধ্য করে ।  যদিও সন্দেহ কথা ও কাজে প্রকাশ পায় না, তথাপি এটা সন্দেহভাজন ব্যক্তির মনোভাবকে প্রভাবিত করে এবং যে ব্যাপারে তাকে সন্দেহ করা হয়েছে সে কাজ করার দিকে তাকে পরিচালিত করে । হযরত আলী (রাঃ) সন্দেহ সম্পর্কে আরো বলেছেন- সঠিক না হলেও সন্দেহ পরিহার করো, নেনা এটা সুস্থকে রোগাক্রান্ত এবং নিরাপরাধীকে সেন্দেহপ্রবণ করে ।’
*গুরার আল হিকাম, ১৫২ পৃষ্ঠা ।*

তিনি আরো ঘোষণা করেছেন যে, সনেদহপ্রবণ লোকেরা সুস্থ দেহ ও উৎসাহ- উদ্দীপনা হতে বঞ্চিত। একজন সন্দিগ্ধচিত্ত মানুষ কখনো সল সুস্থ দেহের অধিকারী হতে পারে না ।
*গুরার আল হিকাম, ৮৩৫ পৃষ্ঠা ।*

No comments:

Post a Comment