ইসলাম

এপ্রিল ফুলঃ ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়

নবম থেকে পঞ্চদশ শতক খ্রিষ্টানদের মধ্য যুগের শেষ পর্যায়। স্পেনের গ্রানাডার মুসলিম রাষ্ট্র তীব্র গতিতে ছুটছিল ধ্বংসের দিকে। রাজা পঞ্চম ফার্ডিনান্ডের সাথে পর্তুগিজ রানী ইসাবেলার বিয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠা খ্রিষ্টান শক্তির ঐক্য স্পেনে মিটমিট করে জ্বলতে থাকা মুসলমানদের প্রদীপে বাতাসের প্রবল ঝাপটা দিলো। ফার্ডিনান্ডের শক্তির সামনে ছোট ছোট খ্রিষ্টান শাসকরা ছিল সাধারণ সর্দারের মতো। মুসলমানদের ধমূচ্যত করার কঠোর প্রয়াস চলে ফার্ডিনান্ডের আমলে। মুনলমানদের আরবি পড়া নিষিদ্ধ হয়। আরবীয় পোশাক বেআইনি করা হয়। বাধ্য করা হয় মুসলমানদের খ্রিষ্টান স্কুলে ভর্তি হতে। যারা খ্র্রিষ্ট ধর্ম গ্রহণ করত,তাদের জন্য ছিল বিভিন্ন সুযোগ। মুসলমানদের জন্য বিশেষ পোশোকের ব্যবস্থা ছিল। হাটেঘাটে অপদস্থ করা হতো তাদের।
পয়লা এপ্রিল ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দ মোতাবেক ৮৯৭ হিজরির ১২ রবিউল আউয়াল। নিভে গেল মিটমিট করে জ্বলতে থাকা মুসলিম রাষ্ট্রশক্তির প্রদীপের শেষ আলো। অনেক আগেই রাজা ফার্ডিনান্ড ও রানী ইসাবেলা মুষলমানদের হাত থেকে কর্ডোভাসহ অনেক অঞ্চল দখল করে নিয়েছিলেন। বাকি ছিল গ্রানাডা। এর শসনকর্তা ছিলেন আবুল হাসান। কিন্তু পুত্র আবু আব্দুল্লাহর বিশ্বসঘাতকতার জন্য হারান শাসন ক্ষমতা। মসনদে বসেন আবু আব্দুল্লহ। কিন্তু বেশি দিন স্থায়ী হয়নি তার এ মসনদ। অবশেষে নিজের জীবন বাঁচাতে ফার্ডিনান্ডের সাথে সন্ধি করেন। বীর সেনাপতি মুসা রাজা ফার্ডিনান্ডের কাছে আত্নসমর্পণের চেয়ে সম্মুক সমরে যুদ্ধ করে প্রাণ বিসর্জন দেয়াকেই অধিক সম্মানজনক মনে করে ছিলেন। আবু আব্দুল্লাহ খ্রিষ্টানদের কাছে আত্নসমর্পন করে প্রাণে রক্ষা পাবেন বলে যে ধারণা করেছিলেন, শিগগিরই তা মিথ্যায় পর্যবসিত হয়। প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ফার্ডিনান্ড বাহিনী শহর অবরোধ করে রাখে। বিচ্ছিন্নভাবে যুদ্ধ চালিয়ে যান বিছু মুসলমান।
এ সময় রাজা ফার্ডিনান্ডের একটি ঘোষাণাপত্র প্রচার করা হয় -”যেসব মুসলমান নিরস্ত্র হয়ে গ্রানাডার মসজিদগুলেতে আশ্রয় নেবে তাদের পূর্ণ নিরাপত্তা দেয়া হবে। আর যারা খ্রিষ্টান জাহাজগুলোতে আশ্রয় নেবে,তাদের অন্যান্য মুসলিম রাষ্ট্রে পাঠিয়েদেয়া হবে। অন্যথায় আমাদের হাতে তোমাদের প্রাণ হারাতে হবে। অসহায় মুসলমানরা সরল বিশ্বাসে বন্ধ করে দেন যুদ্ধ। অনেকে আরোহণ করেন জাহাজে,অনেকে আশ্রয় নেন মসজিদে। কিন্তু প্রতারক ফার্ডিনেন্ড মসজিদে আশ্রয় গ্রহণকারী নিরস্ত্র মুসলিম শিশু-বৃদ্ধ নরনারীকে পুড়িয়ে এবং জাহাজে আরোহণকারী মুসলমানদের জাহাজ ডুবিয়ে হত্যা করে। এ হৃদয়বিদারক ও করুণ ঘটনা যে ‍দিন ঘটেছিল সেদিন ছিল পয়লা এপ্রিল।
বর্তমানে চালু আছে এপ্রিল ফুল ডে’র নানা রকম ইতিহাস ও গল্প। এপ্রিল ফুল বাংলাদেশের বা প্রাচ্যের কোনো উৎসব বা আনন্দের দিন নয়। বাংলাদেশ সহ এই উপমহাদেশে দিনটির প্রচলন হয় ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে ইংরেজদের সাথে যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পরিণামে। ব্রিটিশরা আমাদের প্রায় ২০০ বছর শাসন করেছিল। অন্য অনেক কিছুর মতো ইংরেজরা এ দেশে তাদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির নানা বিসয় চালু করে। এর একটি দৃষ্টান্ত, এপ্রিলের ১তিরিখে এপ্রিল ডে চালু করা।
এপ্রিল ফুল ডে উদযাজনের জন্য একে অন্য কে বোকা বানায়। কেউ কেউ বলে থাকেন,বিভিন্ন দেশে একই সময়ে এপ্রিল ফুল ডে’র সূচনা হয় বিশেষ করে বসন্ত বিদায়ের উৎসবকে সামনে রেখে। ইংল্যান্ডে আঠারো শতক থেকে দিনটি ব্যাপকভাবে উদযাপিত হতে থাকে। ইংরেজ ও ফরাসিরা তাদের উপনিবেশগুলেতে এ প্রথার প্রচলন করে। স্কটল্যান্ডে ৪৮ ঘন্টাব্যাপী এপ্রিল ফুল ডে উদযাপিত হয়। মেক্সিকোতে এ দিবসটি অন্য প্রেক্ষাপটে উদযাপিত করে থাকে।
ডিসেম্বরের ২৮ তারিখ খ্রিষ্টানরা এরাডসের হাতে নিস্পাপ শিশুদের নির্মম হত্যাকান্ডের স্মরণে দিনটি উদযাপন করে। ভিন্ন ইতিহাসে ১৫৬৪ সালে ফ্রান্সে প্রবর্তিত নতুন ক্যালেন্ডারকে সামনে রেখে আধুনিক এপ্রিল ফুল ডে উদডাপিত হয় তার আগে ইউরোপে একটিমত্র ক্যালেন্ডার ব্যবহুত হতো। তখন বছরের সূচনা হতো এপ্রিল মাসের ১তিারিখ থেকে। ১৫৬৪ সালে ফ্রান্সের সম্রাট দশম চার্লস এই পুরনো তারিখ পরিবর্তন করেন।তিনি ১-ই জানুয়ানী থেকে নববর্ষ চালুর ঘোষণা দেন। এটা পৃথিবীর সর্বত্র আজো চালু আছে। এস ওয়াজেদ আলী রচিত ‘গ্রানাডার শেষ বীর’ Jane M Hatch রচিত American Book of Days',Anneli Rufus রচিত The World Holiday Book',The a Encyclopedia America,April fools. com, April fools days An Unsolved History of Urban Legends,    'Origins of April fools day.....ইত্যাদি বই ও ওয়েব সাইট থেকে জানা যায় এপ্রিল ফুল ডে সম্পর্কে অনেক কিছু।
উনবিংশ শতাব্দীর খ্রিষ্টানদের বিখ্যাত বিশ্বকোষ Encyclopedia Lars- এ উল্লেখিত ইহুদি ও খ্রিষ্টানদের বর্ণনায় পয়লা এপ্রল হলো সেই তারিখ, যাতে পারস্যবাসী ও ইহুদিদের পক্ষ থেকে হজরত ঈসা আঃ কে ঠাট্ট-বিদ্রুপের টার্গেট বানানো হয়েছিল। ইঞ্জিলের মধ্যে (বর্তমান বাইবেল) ঘটনার বিবরণ এরুপ- আর সে ব্যক্তি ঈসা আঃ কে বন্দী করে তার সাথে ঠাট্টা পরিহাস করত এবং তাকে আঘাত করত,আর চোখ বেঁধে তার গালে চড়-থাপ্পর মারতো এবং তাকে এই বলে জিজ্ঞাসা করা হতো,নবুয়তের মাধ্যমে বলো কে তোমাকে মারছে ? এভাবে ভর্ৎসনা করে আরো অনেক কথা তার বিরদ্ধে বলা হয়। (লুক, ২২:৬৩-৬৫)। হজরত ঈসা আঃ কে বিচারের নামে পিলাতস থেকে হিরোডস আবার হিরোডস থেকে পিলাতসের আদালতে প্রেরণ করার উদ্দেশ্যে ঠাট্ট পরিহাস করে তাকে কষ্ট দেয়া। আর এ ঘটনা যেহেতু পয়লা এপ্রিলে সংঘটিত হয়েছিল। সে জন্য এপ্রিল ফুল ডে বাস্তবিকভাবেই একটি লজ্জাজনক ঘটনার স্মৃতি।
কাউকে ধোঁকা দেয়া এবং বোকা বনানো সম্পর্কে ইসলামে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। রাসূল সাঃ বলেছেন, যে ব্যক্তি অন্যকে ধোঁকা দেয়,সে আমার উম্মতের অন্তর্ভক্ত নয়।(তিরমিজি,মিশকাতঃ ২৪৮) অভিশপ্ত ওই ব্যক্তি যে কোনো মুমিন ব্যক্তির ক্ষতি সাধন করে কিংবা তাকে ধোঁকা দেয়। (তিরমিজি,মিশকাতঃ ৪২৮) নবী করিম সাঃ অন্যত্র বলেছেন- যে ব্যক্তি যে জাতির অনুসরণ করবে,তার হাশর হবে ওই জাতর সাথে। তিনি আরে বলেছেন- মুসলিম তো সে-ই ,যে কাউকে প্রতারিত করে না,নিজেও প্রতারিত হয় না।
এপ্রিল ফুল উৎসব আজ মুসলমানদের জাতীয় জীবনেও প্রবেশ করেছে। অথচ এর উৎস মূলত মুসলমানদের বিরুদ্ধে স্পেনের মাটিতে খ্রিষ্টানদের প্রতারণাপূর্ণ বিজয়ের ইতহাস। কেননা, পয়লা এপ্রিলের অন্য সব ইতিহাস ১৪৯২ সালের পরে। আর ঈসা আঃ সম্পর্কিত ঘটনার ভিত্তি খুবই দুর্বল। ১৯৯২ সায়ে পশ্চিমা বিশ্বে স্পেন থেকে মুসলিম উৎখাতের ৫০০তম বার্ষিকী (১৪৯২-১৯৯২) মহা দুমধামের সাথে উদযাপন করা হয়। ইতিহাসের হৃদয়বিদারক ঘটনা ভুলে নাগেলে এপ্রিল ফুল কোনো মুসলমানকে আনন্দ দান করতে পারে না। এখন আমরা কি পয়লা এপ্রিল হাসি-আনন্দের সাথে ‘এপ্রিল ফুল ডে’ উদযাপন করবো,নাকি ইউরোপের বুকে অসহায় মুসলিম নারী-পুরুষ,শিশুদের নৃশংস হত্যাকান্ডের স্মরণে দুঃখ অনুভব করব ?


অমুসলিম মনীষীদের দৃষ্টিতে মহানবী (সাঃ)

সর্বযুগের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)। পৃথিবীর বুকে এমন কোন বিবেকবান মানুষ নেই- যার দৃষ্টিতে তিনি মহামানব নন। তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে অনেক অমুসলিম ও বিধর্মী মনীষী অকপটে স্বীকার করেছেন। অমুসলিম মনীষীদের কয়েকজনের কিছু মন্তব্য নিম্নে তুলে ধরা হল -

** প্রফেসর সাধু টি, এল বাস্বনা বলেন- দুনিয়ার অন্যতম মহৎ বীর হিসেবে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) কে আমি অভিবাদন জানাই। মুহাম্মদ (সাঃ) এক বিশ্বশক্তি, মানবজাতির উন্নয়নের এক মহানুভব শক্তি।

** টমাস কারলাইল বলেন- অন্ধকার থেকে আলোর পথের দিশারী ছিলেন মুহাম্মদ (সাঃ)। আমি বলছি, স্বর্গের জ্যোতির্ময় বিদ্যুৎ ছিলেন, এ মহান ব্যক্তিটি। অবশিষ্ট সকল লোক ছিল জ্বালানীর মতো। অবশেষে তারাও পরিণত হয়েছিল আগুনের স্ফুলিঙ্গে।
 তিনি আরো বলেন, মুহাম্মাদ (সাঃ) এর চিন্তাধারা ছিল অতি পবিত্র এবং চরিত্র ছিল অতি উন্নত। তিনি ছিলেন এক সক্রিয় সংস্কারক, যাকে আল্লাহ মানুষের হিদায়াতের জন্য নিযুক্ত করেছেন। তাঁর বানী মূলতঃ খোদারই বাণী। হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) অক্লান্ত প্রচেষ্টার সাথে সত্যের প্রচার করেন। বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চলে তাঁর অনুসারী বিদ্যমান। আর এতে সন্তেহ নেই যে, তাঁর সততাই জয়যুক্ত হয়।

** শ্রীমতি ইন্দ্রিরা গান্ধী বলেন - হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর জীবনাদর্শ সারা বিশ্বের নিকট আজ অত্যন্ত মূল্যবান। সকল শ্রেণীর মানুষের উচিত- তার আদর্শকে অনুমরণ করা।

** লেন পোল বলেন  হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) পৃথিবীর সেই অল্প সংখ্যক সুখী ব্যক্তিদের একজন - যাঁরা তাদের জীবদ্দশাতেই এ মহান সত্যের প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন করে মহাগৌরবের অধিকারী হয়েছেন। তিনি ছিলেন নগণ্য ও পতিতদের ক্ষমাশীল আশ্র্যয়দাতা । তার ছোট্ট চাকরকেও তিনি কোন দিন তিরস্কার করেননি। তিনি ছিলেন সর্বাপেক্ষা মিষ্টভাষী এবং তার  আলোচনা ছিল মনোরম ও হৃদয়গ্রাহী।

** ওয়াশিংটন আবভিং বলেন - দুঃখের দিনগুলোতে মুহাম্মদ (সাঃ) এর যে চেহারা ও সরল ব্যবহার দেখা যেত, বৃহত্তম ও সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হবার পরও তাঁর সেই একই অবস্থা ছিল। রাজকীয় আচার-আচরণ থেকে তিনি এত দূরে ছিলেন যে, কোন ঘরে প্রবেশ করলে সম্মান প্রদর্শনমূলক কেউ কিছু কেরলে তিনি অসন্তুষ্ট হতেন।

** পাদরী বস ওয়ার্থ স্মিথ বলেন- ইতিহাসের একটি সম্পূর্ণ অভূতপূর্ব সৌভাগ্য যে, মুহাম্মদ (সাঃ) একাধারে তিনটির স্থপতি - একটি জাতি, একটি সাম্রাজ্য এবং একটি ধর্ম

** গিবন বলেন - হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) দুনিয়ার একমাত্র আইন প্রণেতা - যিনি দান খাইরাতের সঠিক পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।

** এডওয়াড মুনন্ট বলেন - চরিত্র গঠন ও সমাজ সংস্কারের ক্ষেত্রে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) যে সাফল্য লাভ করেছেন, সে প্রেক্ষাপটে তাঁকে মানবতার মহান দরদী বলে বিশ্বাস করতেই হয়।

** এলিউনার্ড বলেন - এই পৃথিবীর কোন মানুষ যদি কখনও খোদাকে দেখে থাকেন, কোন মানুষ যদি কখনো সৎ ও মহান উদ্দেশ্য নিয়ে খোদার মাঝে নিজেকে বিলিয়ে দিয়ে থাকেন, তাহলে নিশ্চিতরুপে সেই ব্যক্তিটি হলেন আরবের নবী মুহাম্মদ (সাঃ)।
** ডব্লু মন্টোগোমরী ওয়েট বলেন - হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন কুশলী শাসক। শাসন কার্যের জন্য লোক নির্বাচনে তিনি ছিলেন মহাবিজ্ঞ।

** ডঃ গেসটাউলী বলেন - ইসলামের সেই উম্মী নবীর ইতিবৃত্ত বড় আশ্চর্য জনক। তৎকালের কোন বৃহত্তম শক্তি যে জাতিকে নিজের আওতায় আনতে পারেনি, সেই উছৃঙ্গল জাতিকে তিনি এক আওয়াজে বশীভূত করেন। অতঃপর সেই জাতিকে এমন স্তরে উন্নীত করেন, যার দ্বারা পরাশক্তিগুলো তছনছ হয়ে যায়।

** লিও টলস্টয় বলেন - হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর কর্মপদ্ধতি ছিল মানব চরিত্রের বিস্ময়কর দৃষ্টান্ত। আর একথা বিশ্বাস করতে আমরা বাধ্য যে, হযরত মুহাম্মদের (সাঃ) শিক্ষা ও আদর্শ ছিল একান্ত বাস্তবভিত্তিক।

** স্যার উইলিয়াম ম্যুর বলেন - মহানবী (সাঃ) এর আবির্ভাবকালীন সময়ের মতো সামাজিক আধোগতি আর কখনো ঘটেনি এবং মহানবী (সাঃ) এর তিরোধানের সময় সমাজ জীবন যে পূর্ণতা পেয়েছিলো, তা আর কখনো দেখা যায়নি।

** ফিরিপ কে হিট্টি বলেন - মুহাম্মদ (সাঃ) মানবজাতিকে বলেছেন যে, আল্লাহ ব্যতীত আর কোন বিধানদাতা নেই। আর পৃথিবীতে মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি। মুহাম্মদ (সাঃ) এর শাসনামলে দ্বীনের বিধি-বিধান এবংকুরআনের নির্দেশনার যে রকম প্রয়োগ ও ব্যবহার ছিল, প্রত্যেক মুসলিম শাসক থেকে এমনটিরই প্রত্যাশা করা যায়। মুহাম্মদ (সাঃ) - এর আদর্শের এটাই প্রাণশক্তি।

** ডঃ গুষ্ঠাভ উইল বলেন - মুহাম্মদ (সাঃ) রক্তপিপাসু নীতি এবং স্বেচ্ছাচারী শক্তির আইনের পরিবর্তে পবিত্র ও মহান আইন পদ্ধতির জন্ম দিয়েছিলেন। তিনি সেই ব্যক্তি, যিনি সর্ব কালীন আইন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনিই সেই ব্যক্তি যিনি ক্রীতদাসের কঠোর জীবনকে করেছিলেন সহনীয় এবং দরিদ্র, বিধবা ও ইয়াতীমদের দিখিয়েছিলেন পিদৃসুলভ যত্ন।

** স্বমী বিবেকানন্দ বলেন - মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন পয়গাম্বর সাম্যের, মানুষের ভ্রাতৃত্বের, মুসলমানদের ভ্রাতৃত্বের।

** জর্জ বানার্ডশ বলেন - আমাদের মধ্যযূগীয় পাদ্রীগণ হয় অজ্ঞতার কারণে না হয় দুঃখজনক বিদ্বেষের ফলে মুহাম্মদ (সাঃ) এর মহান ব্যক্তিত্ব ও তাঁর প্রচারিত ইসলামধর্মকে কুৎসিত অবয়বে উপস্থাপন করেছেন। আমি পূর্ণ দিব্য দৃষ্টিতে একথা ঘোষণা করেত চাই যে, মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন মানবজাতির পথপ্রদর্শক ও মুক্তিদাতা। বরং আরো স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই যে, বিশ্বের শাসন ও একনায়কত্ব যদি আজ মুহাম্মদ (সাঃ) এর মত পূর্ণাঙ্গ ও পরাকাষ্ঠাসম্পন্ন ব্যক্তির হাতে সোপর্দ করা হয়, তবে এই পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে গোটা বিশ্ব শান্তি ও নিরাপত্তার দোলনায় পরিণত হবে।

** এ্যানি বেসান্ত বলেন - আরবের নবী মুহাম্মদ (সাঃ)- এর জীবন ও চরিত্র-যিনি অধ্যয়ন করেছেন, আর যাই করেন- সেই মহানবী (সাঃ) কে তিনি অবশ্যই ভালবেসে ফেলবেন। মহাস্রষ্টার এ শ্রেষ্ঠ বার্তাবাহী জানতেন- কিভাবে জীবন যাপন করতে হয় এবং কিভবে তা মানুষকে শিক্ষা দিতে হয়। আমি যা বলছি, অনেকেই তা হয়তো জানেন। তবুও যখনই আমি তাকে আলোচনা করি, তখনই সেই শক্তিমান শিক্ষকের প্রতি নতুন করে আবার শ্রদ্ধাবোধ ও অনুরক্তির সৃষ্টি হয়।

** লা কোঁথে ডি বোলোঁভিলার বলেন, মুহাম্মদ (সাঃ) যে ধর্মীয় ব্যবস্থার প্রতিষ্টা করেন। তা তাঁর সাথীদের মন- মেজাজ ও দেশের প্রচলিত রীতি- নীতির ক্ষেত্রে শুধু উপযুক্ত ছিল না,বরং তা ছিল এসবের অনেক উর্ধে্ব। তাঁর এ আদর্শ মানবিক প্রবণতার সাথে এমন সামঞ্জস্য পূর্ণ যে, মাত্র চল্লিশ বছরের কম সময়ের মধ্যে প্রথিবীর প্রায় অর্ধেক মানুষ তাঁর ধর্মে আশ্রয় গ্রহণ করল। সুতরাং এটা এমন একটি মতাদর্শ- যার কথা শুনতে হয় এবং যা স্বাভাবিকভাবেই হৃদয়ে প্রবেশ করে থাকে।


মহানবী (সাঃ) - এর বাণী

1.বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে তার নফ্‌সের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পর পারের জন্য কাজ করে। = আল-হাদীস=
2.যে গৃহে কুকুর বা প্রাণীর ছবি থাকে, তথায় আল্লহর রহমতের ফিরিস্তা আগমন করে না। = বোখারী=
3.যার একদিনের সংস্থান আছে,ভিক্ষা বা ধার করা তাহার জন্য নিষিদ্ধ।=আল-হাদীস=
4.ইমাম হচ্ছে জামিন আর মুয়াজ্জিন হচ্ছে আমানতদার।=আবু দাউদ=
5.সর্বোত্তম সাদকা হলো কোন ক্ষুধার্তকে পেটপুরে খাওয়ানো। =মিশকাত=
6.মওজুদ কারী বড্ড খারাপ ও ঘৃন্য লোক।=মিশকাত=
7.দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন কর। =মহানবী (সাঃ)=
8.প্রচুর ধদন সম্পত্তির ভিতরে সুখ নেই মনের সুখই প্রকৃত সূখ। =আল-হাদীস=
9.দাঁড়িয়ে নামায পড়বে, যদি তাতে অসমর্থ হও তবে বসে পড়বে, যদি তাতেও অসমর্থ হও  তবে শুয়ে পড়বে। =বোখারী=
10.কেয়ামতের দিন বান্দার যে আমল সম্পর্কে প্রথমে হিসাব গ্রহণ করা হবে তা হবে তার নামাজ। =আবু দাউদ=
11.ঈদের নামাজের জন্য পায়ে হাটিয়া যাওয়া এবং বাহির হওয়ার পূর্বে খাওয়া সুন্নত। =তিরমিজী=
12.যে নরী রাত্রি যাপন করেছে,অথচ তার স্বামী ন্যায়সঙ্গত ভাবে তার উপর অসন্তুষ্ট তাঁর নামাজ কবুল হয় না। =তিরমিজী=
13.রমজান মাসে এক দেরহাম দান-খায়রাত করলে অন্যান্য মাসের এক হাজার দেরহাম সমতুল্য দানের সওয়াব পাওয়া যায়। =আল- হাদীস=
14.দুনিয়াতে বসবাস করবে এমন ভাবে যেন তুমি একজন মুসাফির বা পথ অতিক্রমকারী পথিক। =বোখারী=
15.শ্রেষ্ঠ জিকির হলোঃ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, আর শ্রেষ্ঠ দোয়া হলোঃ আলহামদুলিল্লাহ্‌। =তিরমিজী=
16.বান্দা যতক্ষণ নামাযে থাকে ততক্ষন নেকী তার মাথার উপর ঝড়তে থাকে। =তিরমীজি=
17.রিয়াকারী (লোক দেখানো) সামান্য হইলেও উহা এক প্রকার শিরক্‌। =ইবনে মাজা=
18.বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি যে তার নফ্‌সের হিসাব নেয় এবং মৃত্যুর পরপারের জন্য কাজ করে। =আল-হাদীস=
19.হারামের উপার্জন (তথা সুদ, ঘুষ, চুরি, জুলুম ইত্যাদি পয়সার) দ্বারা যে শরীর গঠিত হইয়াছে, তাহা কখনও বেহেশতে প্রবেশ করিবে না। =আল-হাদীস=
20.যখন তুমি কোন রোগীকে দেখতে যাবে, তাকে তোমার জন্য দোয়া করতে বলবে, কেননা তার দোয়া ফিরিশতাদের দোয়ার ন্যায়। =ইবনে মাজা=
21.মুসলিম সেই ব্যক্তি, যে হাতের দ্বারা কথার দ্বারা বা অন্য কোন ব্যবহার দ্বারা কাহাকেও কোন কষ্ট দেয় না। =আল-হাদীস=
22.মূর্খতা এমন এক পাপ- সারা জীবনে যার প্রায়শ্চিত্ত হয় না। =বোখারী=
23.ধনি হওয়া মনের উপর নির্ভর করে না। নির্ভর করে মনের তৃপ্তির উপর। =আল-হাদীস=
24.রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ- তোমরা কোন নারীকে শুধুমাত্র তার অঢেল ধন সম্পদ দেখে বিবাহ করবে না। আবার অনেকে শুধু মাত্র নারীর রুপ- লাবণ্যের মোহে পড়ে তাকে পাত্রী হিসেবে নির্বাচন করে। কিন্তু ক্ষনিকের জন্যও ভেবে দেখে না যে, যোগ্যতা ও প্রতিভা ছাড়া নিছক রুপ সৌন্দর্যের কোন মূল্য নেই।
25.রাসূল (সাঃ) বলেছেনঃ- পাত্রী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তার (পাত্রীর) মধ্যে ৪টি জিনিসের প্রতি তোমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে। (১) ধন সম্পদ (২) বংশ মর্যদা (৩) রুপ-লাবণ্য (৪) ধার্মিকতা। তবে তোমরা ধার্মিকতাকে প্রাধান্য দেবে। নতুবা ক্ষতিগ্রস্থ হবে। =বোখারী=
26.হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন। (টাকা-পয়সা) ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করা জীবন- যাপনের অর্ধেক। মানুয়ের প্রতি ভালোবাসা বিবেক- বুদ্ধির অর্ধেক। আর সুন্দর ভাবে প্রশ্ন করা বিদ্যার অর্ধেক। ইমাম বায়হাকী (রাঃ) হাদীস খানা শো’য়াবুল ঈমান গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।
27.বিবাহ কর কিন্তু তালাক দিওনা, কারণ উহাতে আল্লাহর আরশ কম্পিত হয়। =আল-হাদীস=

No comments:

Post a Comment